মধুর জমে যাওয়া বা স্ফটিকায়ন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা সব ধরনের মধুতেই ঘটে। এটি প্রমাণ করে যে মধুটি অপরিশোধিত, প্রাকৃতিক এবং কাঁচা। তবে মধু জমে যাওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। শীতকালে মধু খাওয়ার প্রবণতা যেমন বাড়ে, তেমনি এই সময়ে মধু জমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নও ওঠে।
এই আর্টিকেলে আমরা মধু জমে যাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং জানবো খাঁটি মধু জমে গেলে তা ব্যবহার করা যাবে কিনা।
জমে গেলেই কি মধু ভেজাল?
অনেকেই মনে করেন, মধু জমে গেলে তাতে চিনি মেশানো হয়েছে। আগে আমারও এমন ধারণা ছিল। একবার আমাদের বাড়িতে মধু জমে গেলে সেটি ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০১৮ সাল থেকে মধু নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, জমে যাওয়া মধু ভেজাল নয়। বরং এটি খাঁটি মধুর একটি বৈশিষ্ট্য।
একবার শীতকালে দিনাজপুর থেকে প্রাকৃতিক মৌচাকের মধু সংগ্রহ করেছিলাম। মাস দু’য়েকের মধ্যেই অধিকাংশ মধু জমে ক্রিমের মতো হয়ে গেল। মধুর রঙ হলুদ থেকে সাদা হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু এটি খাঁটি মধু ছিল, বুঝতে পারলাম যে খাঁটি মধু আসলেই জমে।
সব মধু জমে না কেন?
মধুর জমে যাওয়া নির্ভর করে এতে থাকা গ্লুকোজের পরিমাণের উপর।
যে মধুতে গ্লুকোজ বেশি থাকে: যেমন সরিষা, ধনিয়া, বা লিচু মৌসুমের মধু দ্রুত জমে।
যে মধুতে গ্লুকোজ কম থাকে: যেমন সুন্দরবনের মধু বা কালোজিরা ফুলের মধু ধীরে জমে বা জমেই না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন ফুলের মধু ভিন্ন হারে স্ফটিকায়িত হয়। মধু সংগ্রহের এক-দুই মাস পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময়ে এটি জমে যেতে পারে। এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধুও নির্দিষ্ট সময়ে জমে।
জমে যাওয়া মধু খাওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, জমে যাওয়া মধু সম্পূর্ণ নিরাপদ। জমে যাওয়া মধুতে স্বাদ, গুণাগুণ বা উপকারিতা কমে যায় না। বরং বিদেশে এই জমে যাওয়া মধু বিশেষ কদর পায় এবং একে “ক্রীম হানি” বলা হয়। জমে যাওয়া মধু নরম ক্রিম বা শক্ত দানাদার হতে পারে এবং এর রঙ সাধারণত সাদাটে হয়।
মধু জমে যাওয়ার কারণগুলি সংক্ষেপে:
- মধুতে থাকা গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের অনুপাত।
- তাপমাত্রার পরিবর্তন।
- সংগ্রহের পর মধু সংরক্ষণের পদ্ধতি।
মধু জমে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটি খাঁটি মধুরই বৈশিষ্ট্য। তাই জমে যাওয়া দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। মধু জমলে গরম পানির সাহায্যে সহজেই তা আবার তরল করা যায়। সুতরাং, খাঁটি মধু উপভোগ করুন এবং সুস্থ থাকুন।
রেফারেন্স: আলওয়ান হানি